top of page

আলুর চপ

  • Writer: Abhijit Chakraborty
    Abhijit Chakraborty
  • Apr 13, 2020
  • 4 min read


থমথমে থরহরিকম্প করোনা বাজারে এক সাথে অনেক গুলো ভালো খবর পেয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেছে ভজহরি মুখুজ্যের। নাম টা চেনা চেনা লাগছে তাই না? ঠিক ধরেছেন, এ ভজহরি যে সে ভজহরি নয়।


প্রথম খবর - এ বছর  সবাই পাশ । পরীক্ষায় ফেল ব্যাপারটা কতটা কষ্টের সেটা ভজহরি মুখুজ্যের থেকে বেশি কেউ বোধহয় জানে না।


দ্বিতীয় খবর - মিষ্টির দোকান খুলছে। এক সপ্তাহ মিষ্টি না খেতে পেরে রোজ রাতে গুপি বাঘার স্বপ্ন দেখছে আকাশ থেকে মিষ্টি পরার।


তৃতীয় খবর - করোনা যুদ্ধে বাঙালির শীত - গ্রীষ্মের চিরকালীন সঙ্গী ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধককে হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দান। এতদিন ধরে ম্যালেরিয়া কে বাঁচিয়ে রেখে বাঙালি যে কি উপকার টাই করেছে সেটা এখন সারা বিশ্ব বুঝতে পারছে। বাঙালী হিসেবে বুকের ছাতি দেড় ইঞ্চি বেড়ে গেছে।


সকাল সকাল কমলেশ ব্যানার্জি , কুশল মিত্র আর স্বর্নেন্দু সেন কে তলব করা হয়ে গেছে, সন্ধ্যে ছ'টার মধ্যে যেন আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। করোনার‌ ভ্রুকুটি আর সরকারের নিষেধাজ্ঞা শিকেয় তুলে আড্ডা মারতে বসতে হবে ! কি বিপত্তি ! সবাই জানে আড্ডার আয়োজন না হলেই তো আবার সেই গাট্টা খেতে হবে। এমনিতেই বাজারে সিঙ্গি মাছ পাওয়া াযাচ্ছে না, রোজ পটল সেদ্ধ ঝোল খেতে হচ্ছে, তাঁর উপর আবার গাট্টা খেতে কার ই আর ভালো লাগে!


পটলডাঙা স্ট্রিটের চাটুজ্যেদের রোয়াক কদিন ধরে সরগরম। নিয়ম করে সকাল - সন্ধ্যে আড্ডা টা আবার সেই পুরনো ফর্মা তে। স্বর্ণেন্দু সেন, ওরফে হাবুল সেন একটু মৃদু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিল


-"টেনি দা, পুলিশ যদি আমাগো তুইল্যা লৈয়া যায়? "

তুড়ি মেড়ে অকুতোভয় টেনি দা - "তোর সাহস তো কম নয়? তুই আমাকে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছিস? গতকাল রাতেই অনুজ ফোন করে জিজ্ঞাসা করছিল , ওর ম্যাডাম ওর থেকে ওপিনিয়ন চেয়েছে লকডাউন টা আরো বাড়ানো উচিৎ কি না ? বেচারা সবে কিছুদিন হলো পুলিশ কমিশনার হয়েছে , কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। "

- " তুমি নিশ্চয়ই বললে, তুলে দিতে?"

- " তোর পেটের মতন ই তোর ঘটের বুদ্ধি টা দুর্বল , সে বিষয়ে তো আমার কোনো সন্ধ্যে নেই, প্যালা।"


কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। বেশি কথা বলতে গেলেই আবার বিপত্তি বাড়বে। ফাই ফরমাশ ও বাড়তে পারে। কুশল মিত্র ওরফে ক্যাবলা দু - দিন আগে অফিসের কাজ আছে বলে সকালের আড্ডা তে আসতে পারে নি - তার খেসারত দিচ্ছে এখন প্রতিদিন । বিকেলের আড্ডা তে নিয়ম করে কুড়ি পিস রসগোল্লা আর লেডিগেনি আনার দায়িত্ব ক্যাবলার উপর। না আনতে পারলেই গাট্টা। দুপুর বারোটায় মিষ্টি দোকানের ঝাঁপ খোলার আগে থেকে বেচারা কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দশ মিনিট লেট করলেই রসগোল্লা শেষ । বাঙালি সব ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু তোলা আদায় আর শেষ পাতে রসগোল্লা - নাহ্ ওই দুটি 'ছাড়চি না, ছাড়বো না'। রক্তে একটু মিষ্টির ভাব বেশি না থাকলে ডায়াবেটিক ক্লিনিক গুলো চলবে কি করে?


আজকে সন্ধ্যে তে টেনিদা খুশিতে ডগমগ। ক্যাবলা মিষ্টির সাথে দশ পিস আলুর চপ ও নিয়ে এসেছে। চপ তৈরি যে একটি শিল্পের তকমা পেয়েছে , সেটা টেনি দা'র মস্তিস্কপ্রসূত হলে অবাক হবো না। রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরী হবার পরেও বিনিয়োগকারীরা‌ পাশের রাজ্যে ফুরুৎ করে চলে যাবার পর অর্থমন্ত্রীর থেকেও হয়তো ফোন এসেছিল।


লাল লাল চপের দিকে একটু হাত বাড়িয়ে ছিলাম। টেনি দা বাজ পাখির মতন ছো মেরে পুরো ঠোঙা টা সাঁটিয়ে দিল। আমার বরাতে সেই এক ডায়লগ - "তোর ভালোর জন্যেই আমাকে পুরোটা খেতে হলো রে প্যালা। তোর পেটের জন্যে এটা বিষ রে।" সাথে আজ নতুন এক লাইন আরো যুক্ত হলো - " করোনার কৃপাতে কোনো ডাক্তার ও পাওয়া যাবে না, রাত বিরেতে ব্যাথা বাড়লে কোথায় যাব বল? "


নিজের পেটের কথা ছেড়ে দিলাম না হয়, তা বলে ক্যাবলা আর হাবুল ওই লাল টুকটুকে আলুর চপের স্বর্গীয় আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে? সহমর্মিতায় আমার বিপ্লবী চেতনা প্রতিবাদের ভাষা খুঁজতে লাগলো। আমি নির্লিপ্ত মুখে টেনি দা'র চপ খাওয়া দেখে যেতে লাগলাম। ক্যাবলার উপর আমার অগাধ বিশ্বাস। এইরকম অত্যাচার কি মুখ বুজে সহ্য করবে? গরম গরম লাল চপের গন্ধ কি ওর নাকে যাচ্ছে না?


ঘন্টা দেড়েক আড্ডার পর, আমরা এবার চপের শোক ভুলে নিজেদের বাড়ির দিকে হাঁটা দেব বলে উঠছি, হটাৎ ক্যাবলার গলায় কেমন একটা ভয়ের ভাব , চোখ উল্টোদিকের দত্তদের বাড়ির ছাদের দিকে।

- "টেনি দা,  কার্নিশে ওটা কি গো?"


অন্ধকারে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমরা কেউ ই কিছু দেখতে পেলাম না। কিন্তু ক্যাবলার গলায় ভয়ের ভাবটা কিছুতেই যাচ্ছে না।


-"তুমি সাবধানে থেকো টেনি দা। তিন চারদিন ধরে শুনছি পাড়াতে অনেক গুলো ভাম বিড়াল বেরিয়েছে। চপ কিনতে গিয়েই শুনলাম, চপের দোকানের মাসী বললো কাল থেকে আর চপ ভাজবে না।"

-" ঠিক কইসোস ক্যাবলা। আমাগো দ্যাশের বাড়িতে রাতের বেলায় ভাম বিড়াল গুলা ওত প্যাইতা থাকতো।ভাজাভুজি হইলে ই, ঝাঁপাইয়া পরতো। বাঘের লয় শক্তি ওই গুলার। "


টেনি দা'র চোখ কি রকম স্থির। আমি ও মাঠে নেমে পড়লাম, হাবুল আর ক্যাবলার সাথে।


-" না রে, ক্যাবলা তুই ঠিক ই বলেছিস। কার্নিশে কিছু একটা নড়া চড়া করছে। " - ক্যাবলা ও হাবুলের যুগলবন্দিতে আমিও কার্নিশে ভাম দেখতে পাচ্ছি।


-"হে হে, যোগ সর্পের হাঁড়ি তে হাত ঢোকানো টেনি কে তোরা ভয় দেখাচ্ছিস ভাম বিড়ালের? ভাম বিড়ালের সাথে কুস্তির গল্পটা তারমানে তোদের জানা নেই।"


আষাঢ়ে গল্প শোনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমাদের। অন্য দিন গল্পের গরুর গাছে ওঠা ভালোই লাগে। কিন্তু আজ, ওই লাল চপের দিব্যি, চোখের সামনে শুধু ই প্রতিশোধের আগুন।


-" করোনা আক্রান্ত ভাম বিড়ালের সাথে তুমি কুস্তি লড়বে না কি গো টেনি দা?"

-"প্যালা, এবার কি তুই গাট্টা টা খাবি? বিড়ালের আবার করোনা হয় না কি?"

-"না গো টেনি দা, প্যালা একদম ঠিক বলছে। আরে বললাম না, মাসী কাল থেকে আর চপের দোকান খুলবে না। তিন - দিন আগে যদু বাবুর ছেলে চপ খাচ্ছিল, আয়েশ করে। হটাৎ করে ভাম বিড়াল টা এসে শুধু চপের ঠোঙা টা হাতায় নি, দু - চার ঘা মোক্ষম চড় ও কসিয়েছে বাবুলাল কে। ঠিক তার পরের দিন থেকে বাবুলালের জ্বর। ব্লাড টেস্টে ধরা পড়ল পজিটিভ। বাবুলাল বিগত দশ দিন বাড়ির থেকে বেরোয় নি, তাহলে ভাইরাস টা এলো কোথা থেকে? সাধন জেঠু ই বললো, তাহলে নিশ্চয় ই ওই ভাম টার থেকে ই হয়েছে। কাগজে ও পড়লাম বাঘের ও করোনা পজিটিভ। আফটার অল, বাঘের মাসী, দিনের শেষে বোনপোর সাথে গল্প করতে গেছিল নিশ্চয়ই। "


টেনি দা'র হাতে ধরা ঠোঙার ঠক ঠকানি শুনতে পাচ্ছি।


-"শোনা যাচ্ছে, গত পরশু যে যে ওই মাসীর দোকানের চপ খেয়েছে সবার ই আজ সকালে পজিটিভ ধরা পড়েছে। চপ খেকো ভাম বিড়াল গুলো পুরো কমিউনিটি স্প্রেড করে দিল গো। পুলিশ এসে চপের দোকান আজ থেকে বন্ধ করে দিল। " - ক্যাবলার প্রত্যয়ী কণ্ঠে , সন্ধ্যের আবছা হলুদ আলোতে টেনি দা আশে পাশে শুধু ভাম বিড়াল দেখছে এই নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।


কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয় শুনেছিলাম। টেনি দার চোখে মুখে চপাতঙ্কের লক্ষণ আর মৈনাক পর্বত সমান নাক দিয়ে ঘনঘন নিশ্বাসের আওয়াজ। মূর্ছা যাবার আগে ক্ষীণ গলায় আকুতির সুর - " ওদের কে আইসলেশনে নিয়ে যাবার কি ব্যাবস্থা হয়েছে ? আর টেস্টিং? কাল থেকে কদিন রকে বসে আড্ডা টা বন্ধ থাকুক । তোরা কি সব ঝুমঝুমি তে আড্ডা মারিস, ওখানেই না চপ - মিষ্টি ছাড়া আড্ডা দেব। "




Comments


©2020 by Hizibizi Online

bottom of page